প্রিয় শিক্ষার্থী, এ অঞ্জলি চলাকালীন শিক্ষক তোমাকে মজার মজার শ্রেণি কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাবেন। এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে তুমি অষ্ট কল্যাণ বাণী, যীশুর ভালোবাসা, ক্ষমা ও সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া বিষয়ে জানতে পারবে। সাধ্বী মাদার তেরেজা ও ড. উইলিয়াম কেরী'র মতো তুমি নিজেকে মানব কল্যাণে নিয়োজিত করতে পারবে।
তুমি নিশ্চয়ই পাহাড়ে বেড়াতে পছন্দ করো। আমাদের প্রিয় যীশু অনেক সময় পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বা বসে শিষ্যদের ও অন্য মানুষদের উপদেশ দিয়েছেন। এই সেশনে যীশু পর্বতের/পাহাড়ের উপর যেভাবে উপদেশ প্রদান করতেন তাঁর একটি বাস্তব চিত্র শিক্ষক তোমাকে কল্পনা করতে বলবেন। অতঃপর স্কুলের আশপাশের যে কোনো একটি স্থান নির্বাচন করবেন। যে স্থানটি হবে একটু উঁচু এবং দেখতে পাহাড়ের মতো। যীশু উঁচু স্থান বেছে নিয়েছেন এজন্য যে উঁচু স্থানে যখন আমরা কথা বলি তখন সবাই তা শুনতে পায়। সবার সাথে আমাদের আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়।
এবার শিক্ষক তোমাদের একজন করে এই উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে যে কোনো বিষয়ের উপর কিছু বলতে বলবেন। আশা করি তুমি এমন কিছু বলবে যা হবে সবার জন্য মঙ্গলকর। তুমি কি ভয় পাচ্ছো? ভয় পাবে না ।
সবার বক্তব্য শোনার পর শিক্ষক নিজে উপরে উঠে সবার সুন্দর বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও প্রশংসা করবেন। তিনি তোমাদের প্রশ্ন করবেন খ্রীষ্টধর্মের মৌলিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ কী কী? তুমি শিক্ষকের এ প্রশ্নের উত্তর দিও।
শিক্ষক ও সহপাঠীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সমবেত প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করো।
শিক্ষক তোমাদের ৫/৬টি দলে ভাগ করবেন। তোমরা নিজ দলের নেতা নিজেরাই নির্বাচন করবে। দলে বসে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এজন্য ১০ মিনিট সময় পাবে। এবার পোস্টার পেপারে এ গুণাবলির তালিকা তৈরি করো।
তারপর অন্য দলের সাথে এ গুণসংবলিত পোস্টার কাগজ বিনিময় করো। লক্ষ করো অন্য দল নতুন কোনো গুণের কথা লিখেছে কি না যখন তুমি অন্য দল থেকে তোমার পোস্টার কাগজ ফিরে পাবে তখন তোমার না লেখা গুণটি যুক্ত করবে।
শিক্ষক ও সহপাঠীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে সমবেত গান/প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করো।
প্রিয় শিক্ষার্থী, যীশু এ পৃথিবীতে অবস্থানকালে অনেক শিক্ষা ও উপদেশ দিয়েছেন। তাঁর উপদেশের মূল উদ্দেশ্য হলো আমরা যেন ঈশ্বরের ভালোবাসা পেয়ে সুখী হতে পারি। এজন্য তিনি আমাদের অষ্টকল্যাণ বাণী বা আটটি সুখপন্থা দিয়েছেন। যীশুর দেয়া এ উপদেশ বাণী আমাদের কুপ্রবৃত্তি থেকে রক্ষা করে মানবিক গুণাবলি অর্জনে সাহায্য করে। এসো বাইবেল থেকে শিষ্যদের দেওয়া যীশুর উপদেশ বাণী শুনি।
খ্রীষ্টধর্মের মৌলিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ
যীশু অনেক লোক দেখে পাহাড়ের উপর উঠলেন। তিনি বসলে পর তাঁর শিষ্যেরা তাঁর কাছে আসলেন। তখন
তিনি শিষ্যদের এই বলে শিক্ষা দিতে লাগলেন :
“অন্তরে যারা নিজেদের গরিব মনে করে তারা ধন্য,
কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাদেরই।
যারা দুঃখ করে তারা ধন্য,
কারণ তারা সান্ত্বনা পাবে।
যাদের স্বভাব নম্র তারা ধন্য,
কারণ পৃথিবী তাদেরই হবে।
যারা মনে-প্রাণে ঈশ্বরের ইচ্ছামতো চলতে চায় তারা ধন্য,
কারণ তাদের সেই ইচ্ছা পূর্ণ হবে।
দয়ালু যারা তারা ধন্য,
কারণ তারা দয়া পাবে।
যাদের অন্তর খাঁটি তারা ধন্য,
কারণ তারা ঈশ্বরকে দেখতে পাবে।
লোকদের জীবনে শান্তি আনবার জন্য
যারা পরিশ্রম করে তারা ধন্য,
কারণ ঈশ্বর তাদের নিজের সন্তান বলে ডাকবেন।
ঈশ্বরের ইচ্ছামতো চলতে গিয়ে
যারা অত্যাচার সহ্য করে তারা ধন্য,
কারণ স্বর্গ-রাজ্য তাদেরই।
“তোমরা ধন্য, যখন লোকে আমার জন্য তোমাদের অপমান করে ও অত্যাচার করে এবং মিথ্যা করে তোমাদের নামে সব রকম মন্দ কথা বলে। তোমরা আনন্দ কোরো ও খুশি হোয়ো, কারণ স্বর্গে তোমাদের জন্য মহা পুরস্কার আছে। তোমাদের আগে যে নবীরা ছিলেন লোকে তাঁদেরও এইভাবে অত্যাচার করত। মথি ৫: ১-১২
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, ঈশ্বর আমাদের বিভিন্নভাবে আশীর্বাদ করেছেন যেন আমরা সুখী হতে পারি। লক্ষ কর, যীশু বলেছেন “অন্তরে যারা দীন”। যীশু বলতে চেয়েছেন যে সম্পূর্ণ নির্লোভ ও নিরাসক্ত অন্তরে থাকলে আমরা সুখী হবো। মানুষ ধনী বা দরিদ্র যা-ই হোক না কেন, সে যদি ধনসম্পদের মোহ থেকে মুক্ত হয়ে তার যা আছে তার সদ্ব্যবহার করে তবে ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেয়ে সুখী হবে।
“দুঃখ-শোকে কাতর যারা” : প্রভু যীশু এখানে সেই দুঃখ-শোকের কথা বলেছেন, যা ভক্তের অন্তরে জেগে উঠে নিজের বা পরের দুর্দশা-দুর্ভোগের জন্য, নিজের পাপ ও অযোগ্যতার জন্য, কিংবা জগতে যে-সব বড় অন্যায়-অধর্ম অবাধে চলে, তারই জন্য ।
“ধার্মিকতার জন্য ব্যাকুল যারা” অর্থাৎ যারা মনে-প্রাণে ধর্মিষ্ঠ হতে চায়, সবার জন্য যা ভালো তাই করতে চায়; যারা সবসময় ঈশ্বরের ইচ্ছামতোই চলতে চায়। যারা প্রতিনিয়ত প্রার্থনায় রত থাকে।
“অন্তরে যারা পবিত্র” : অর্থাৎ যারা যথাসাধ্য নিষ্পাপ হয়ে থাকার চেষ্টা করে, যাদের প্রতিটি অভিপ্রায়ে খাঁটি সততা থাকে, প্রতিটি কাজে অকপট সাধুতা থাকে।
যীশুর দেখানো আদর্শ নিজের জীবনে রূপায়িত করে আশপাশের মানুষকে সেই পুণ্য আদর্শে প্রভাবিত করাই যীশুর শিষ্য হিসেবে আমাদের কর্তব্য। প্রকৃত শিষ্যের ধার্মিক জীবন দেখে অন্য লোক এই কথা বুঝতে পারে যে, যীশুর পথ যথার্থ ধর্মের পথ এবং সে পথ যে প্রকৃত মঙ্গলের পথ, তা-ও সে অন্তরে অনুভব করে, আস্বাদন করে। যারা অন্যের জীবনে শান্তি আনার জন্য পরিশ্রম করে তারা ধন্য। এখানে শান্তি স্থাপনকারী মানুষদের ধন্য বলা হয়েছে কারণ তারা অন্যের সুখ-শান্তি চিন্তা করে ঈশ্বরের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠে।
বিচার-দিনের বিষয়ে দৃষ্টান্ত ও শিক্ষা
“মনুষ্যপুত্র সমস্ত স্বর্গদূতদের সঙ্গে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন তখন তিনি রাজা হিসাবে তাঁর সিংহাসনে মহিমার সঙ্গে বসবেন। সেই সময় সমস্ত জাতির লোকদের তাঁর সামনে একসঙ্গে জড়ো করা হবে। রাখাল যেমন ভেড়া আর ছাগল আলাদা করে তেমনি তিনি সব লোকদের দু'ভাগে আলাদা করবেন। তিনি নিজের ডান দিকে ভেড়াদের আর বাঁ দিকে ছাগলদের রাখবেন।
“এর পরে রাজা তাঁর ডান দিকের লোকদের বলবেন, “তোমরা যারা আমার পিতার আশীর্বাদ পেয়েছ, এস। জগতের আরম্ভে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার অধিকারী হও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দিয়েছিলে; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দিয়েছিলে; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন কাপড় পরিয়েছিলে; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম তখন আমার দেখাশোনা করেছিলে; আর যখন আমি জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।'
“তখন সেই ঈশ্বরভক্ত লোকেরা উত্তরে তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, আপনার খিদে পেয়েছে দেখে কখন আপনাকে খেতে দিয়েছিলাম বা পিপাসা পেয়েছে দেখে জল দিয়েছিলাম? কখনই বা আপনাকে অতিথি হিসাবে আশ্ৰয় দিয়েছিলাম, কিংবা খালি গায়ে দেখে কাপড় পরিয়েছিলাম? আর কখনই বা আপনাকে অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে আপনার কাছে গিয়েছিলাম?”
“এর উত্তরে রাজা তখন তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমার এই ভাইদের মধ্যে সামান্য কোন একজনের জন্য যখন তা করেছিলে তখন আমারই জন্য তা করেছিলে।'
“পরে তিনি তাঁর বাঁ দিকের লোকদের বলবেন, ‘ওহে অভিশপ্ত লোকেরা, আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও। শয়তান এবং তার দূতদের জন্য যে চিরকালের আগুন প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্যে যাও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দাও নি; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দাও নি; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দাও নি; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন আমাকে কাপড় পরাও নি; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম এবং জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে যাও নি।'
“তখন তাঁরা তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, কখন আপনার খিদে বা পিপাসা পেয়েছে দেখে, কিংবা অতিথি হয়েছেন দেখে, কিংবা খালি গায়ে দেখে, কিংবা অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে সাহায্য করিনি?”
“উত্তরে তিনি তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা যখন এই সামান্য লোকদের মধ্যে কোন একজনের জন্য তা কর নি তখন তা আমার জন্যই কর নি।”
তারপর যীশু বললেন, “এই লোকেরা অনন্ত শাস্তি পেতে যাবে, কিন্তু ঐ ঈশ্বরভক্ত লোকেরা অনন্ত জীবন ভোগ করতে যাবে।” মথি ২৫ : ৩১-৪৬
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
যীশু স্বর্গদূতদের নিয়ে আবার আসবেন। সেটি হবে তাঁর দ্বিতীয় আগমন। তিনি রাজা হিসেবে আসবেন। সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁর হবে। যখন আসবেন তখন সব জাতির লোকদের তাঁর সামনে একত্র করা হবে। রাখাল যেমন মেষ ও ছাগ আলাদা করেন, সব লোকদের তিনি তেমন দু'ভাগ করবেন। ডান দিকে মেষদের রাখবেন। আর বাম দিকে ছাগদের রাখবেন। তারপর ডান দিকের লোকদের বলবেন, “তোমরা পিতার আশীর্বাদ পেয়েছো। তোমাদের জন্য যে জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে তার অধিকারী হও। কারণ আমার যখন খিদে পেয়েছিলো, তখন তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে। আমার যখন পিপাসা পেয়েছিলো, তখন তোমরা আমাকে জল দিয়েছিলে। আমি যখন অতিথি হয়েছিলাম, তখন তোমরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলে। আমার যখন পোষাক দরকার ছিলো, তখন তোমরা আমাকে পোষাক দিয়েছিলে। আমি যখন অসুস্থ হয়েছিলাম, তখন তোমরা আমার দেখাশোনা করেছিলে। আমি যখন জেলখানায় ছিলাম, তখন তোমরা আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।”
তখন ডান দিকের সেই লোকেরা বলবে, “প্রভু, এ সমস্ত কাজ আমরা কখন করেছিলাম?” তখন যীশু বলবেন, “তোমরা যখন কোনো দূর্বল লোকের জন্য এ কাজগুলো করেছিলে, তখন আমারই প্রতি করেছিলে। আর যারা এ কাজগুলো করে নাই, তখন তারা আমারই প্রতি করে নাই। তাই তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত দণ্ড। আর যারা করেছে তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত জীবন।”
সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করো। শিক্ষক তোমাকে জিজ্ঞেস করবেন যে তুমি কোন্ দিন, কোথায়, কাকে, কীভাবে, যেমন যে কোনো একজন ক্ষুধার্ত, পীড়িত, দুঃখী, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন ব্যক্তিকে খাবার, আশ্রয়, সান্ত্বনা সেবা দিয়েছিলে। শিক্ষক তোমাকে তার একটি তালিকা তৈরি করতে বলবেন। সুন্দরভাবে তালিকাটি তৈরি করো। শিক্ষক হয়তো তোমাকে তোমার অনুভূতি ব্যক্ত করতে বলতে পারেন।
মানুষকে ভালোবাসা মানে ঈশ্বরকে ভালোবাসা
“মনুষ্যপুত্র সমস্ত স্বর্গদূতদের সঙ্গে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন তখন তিনি রাজা হিসাবে তাঁর সিংহাসনে মহিমার সঙ্গে বসবেন। সেই সময় সমস্ত জাতির লোকদের তাঁর সামনে একসঙ্গে জড়ো করা হবে। রাখাল যেমন ভেড়া আর ছাগল আলাদা করে তেমনি তিনি সব লোকদের দুভাগে আলাদা করবেন। তিনি নিজের ডান দিকে ভেড়াদের আর বাঁ দিকে ছাগলদের রাখবেন।
“এর পরে রাজা তাঁর ডান দিকের লোকদের বলবেন, ‘তোমরা যারা আমার পিতার আশীর্বাদ পেয়েছ, এসো। জগতের আরম্ভে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার অধিকারী হও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দিয়েছিলে; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দিয়েছিলে; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দিয়েছিলে; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন কাপড় পরিয়েছিলে; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম তখন আমার দেখাশোনা করেছিলে; আর যখন আমি জেলখানায় বন্দি অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে গিয়েছিলে।'
“তখন সেই ঈশ্বরভক্ত লোকেরা উত্তরে তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, আপনার খিদে পেয়েছে দেখে কখন আপনাকে খেতে দিয়েছিলাম বা পিপাসা পেয়েছে দেখে জল দিয়েছিলাম? কখনই বা আপনাকে অতিথি হিসেবে আশ্ৰয় দিয়েছিলাম, কিংবা খালি গায়ে দেখে কাপড় পরিয়েছিলাম? আর কখনই বা আপনাকে অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে আপনার কাছে গিয়েছিলাম?”
“এর উত্তরে রাজা তখন তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আমার এই ভাইদের মধ্যে সামান্য কোনো একজনের জন্য যখন তা করেছিলে তখন আমারই জন্য তা করেছিলে।'
“পরে তিনি তাঁর বাঁ দিকের লোকদের বলবেন, ‘ওহে অভিশপ্ত লোকেরা, আমার কাছ থেকে তোমরা দূর হও। শয়তান এবং তার দূতদের জন্য যে চিরকালের আগুন প্রস্তুত করা হয়েছে তার মধ্যে যাও। যখন আমার খিদে পেয়েছিল তখন তোমরা আমাকে খেতে দাওনি; যখন পিপাসা পেয়েছিল তখন জল দাওনি; যখন অতিথি হয়েছিলাম তখন আশ্রয় দাওনি; যখন খালি গায়ে ছিলাম তখন আমাকে কাপড় পরাওনি; যখন অসুস্থ হয়েছিলাম এবং জেলখানায় বন্দী অবস্থায় ছিলাম তখন আমাকে দেখতে যাওনি।'
“তখন তাঁরা তাঁকে বলবে, ‘প্রভু, কখন আপনার খিদে বা পিপাসা পেয়েছে দেখে, কিংবা অতিথি হয়েছেন দেখে, কিংবা খালি গায়ে দেখে, কিংবা অসুস্থ বা জেলখানায় আছেন জেনে সাহায্য করিনি?”
“উত্তরে তিনি তাদের বলবেন, ‘আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা যখন এই সামান্য লোকদের মধ্যে কোনো একজনের জন্য তা করনি তখন তা আমার জন্যই করনি।”
তারপর যীশু বললেন, ,“এই লোকেরা অনন্ত শাস্তি পেতে যাবে, কিন্তু ঐ ঈশ্বরভক্ত লোকেরা অনন্ত জীবন ভোগ করতে যাবে।” মথি : ২৫ : ৩১-৪৬
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
“মানবপুত্র” বা “রাজা” বলতে প্রভু যীশু নিজেকেই বুঝিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমাদের পার্থিব জীবনের নয় বরং আধ্যাত্মিক জীবনের রাজা। প্রভু যীশু তাঁর ঐশ মহিমায় আবির্ভূত হয়ে সমস্ত মানুষের বিচার করতে এসেছেন। ধার্মিক অধার্মিক সকলেই এখন যীশুর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভ্রাতৃপ্রেমের মানদণ্ডে যীশু তাদের বিচার করবেন। অসহায় মানুষের সেবা করে ধার্মিকেরা তাঁরই সেবা করেছেন।
আর অসহায় মানুষকে ফিরিয়ে দিয়ে অধার্মিকেরা তাঁকেই ফিরিয়ে দিয়েছে। এই মহাবিচারের শেষ পরিণতি কী হবে? ধার্মিকেরা যাবে তাদের জন্যে চিরকাল থেকে প্রস্তুত করে রাখা সেই শাশ্বত জীবনধামে। তারা তো স্বর্গদূতদেরই মতো পরমপিতার আশীর্বাদের পাত্র। কারণ তারাই হলো ঈশ্বরের সেই প্রকৃত প্রীতিভাজন যারা একজন ক্ষুধার্তকে খাদ্য দিয়ে পরিতৃপ্ত করেছে, পীড়িতদের দিয়েছে সেবা, দুঃখী ও শোকার্তদের দিয়েছে সান্ত্বনা, বস্ত্রহীন কাউকে দেখে নিজের জামা খুলে দিয়েছে, আশ্রয়হীন ব্যক্তিকে দিয়েছে আশ্রয়। ।
এদিকে অধার্মিকেরা যাবে স্বয়ং শয়তানেরই সেই শাশ্বত দণ্ডলোকে। যাদের অন্তর ছিল কঠিন ও স্বার্থপরতায় পরিপূর্ণ। তারা শয়তানের মতো ঐশ অভিশাপের পাত্র।
পরবর্তী সেশনে বাইবেলে বর্ণিত “ক্ষমাশীল পিতা ও হারানো পুত্রের মন পরিবর্তন” গল্পটির উপর তোমরা শ্রেণিকক্ষে ভূমিকাভিনয় করবে। শিক্ষকের সহায়তায় অভিনয়ের চিত্রনাট্য তৈরি করে আনবে। ভূমিকাভিনয়ের পূর্বে চিত্রনাট্য তৈরির জন্য বাইবেলের সংশ্লিষ্ট গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়বে। কে কোন চরিত্রে অভিনয় করবে তা নির্ধারণ কর। অভিনয়ের জন্য তুমি মানসিক ও সার্বিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে আসবে। শিক্ষক তোমাদের প্রাসঙ্গিক video দেখাতে পারেন।
ভূমিকাভিনয়
ভূমিকাভিনয়ের জন্য চরিত্র ও পোশক-পরিচ্ছদ বেছে নাও। ভূমিকাভিনয়ের জন্য শ্রেণিকক্ষের সামনের দিকে একটু জায়গা করে নাও। যদি তোমাদের স্কুলে অডিটোরিয়াম/উন্মুক্ত মাঠ থাকে সেখানে অভিনয় করতে পারো।
ক্ষমাশীল পিতা, হারানো পুত্র ও কঠিন-হৃদয় ভাইয়ের উপমা-কাহিনী
তারপর যীশু বললেন, “একজন লোকের দু’টি ছেলে ছিল। ছোট ছেলেটি তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, আমার ভাগের সম্পত্তি আমাকে দিন।' তাতে সেই লোক তাঁর দুই ছেলের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন। কিছু দিন পরে ছোট ছেলেটি তার সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা-পয়সা নিয়ে দূর দেশে চলে গেল। সেখানে সে খারাপ ভাবে জীবন কাটিয়ে তার সব টাকা-পয়সা উড়িয়ে দিল। যখন সে তার সব টাকা খরচ করে ফেলল তখন সেই দেশের সমস্ত জায়গায় ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। তাতে সে অভাবে পড়ল। তখন সে গিয়ে সেই দেশের একজন লোকের কাছে চাকরি চাইল। লোকটি তাকে তার শূকর চরাতে মাঠে পাঠিয়ে দিল। শূকরে যে শুঁটি খেত সে তা খেয়ে পেট ভরাতে চাইত, কিন্তু কেউ তাকে তাও দিত না।
“পরে একদিন তার চেতনা হল। তখন সে বলল, ‘আমার বাবার কত মজুর কত বেশী খাবার পাচ্ছে, অথচ আমি এখানে খিদেতে মরছি। আমি উঠে আমার বাবার কাছে গিয়ে বলব, বাবা, ঈশ্বর ও তোমার বিরুদ্ধে আমি পাপ করেছি। কেউ যে আর আমাকে তোমার ছেলে বলে ডাকে তার যোগ্য আমি নই। তোমার মজুরদের একজনের মত করে আমাকে রাখ।'
“এই বলে সে উঠে তার বাবার কাছে গেল। সে দূরে থাকতেই তাকে দেখে তার বাবার খুব মমতা হল। তিনি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলেন। তখন ছেলেটি বলল, ‘বাবা, আমি ঈশ্বর ও তোমার বিরুদ্ধে পাপ করেছি। কেউ যে আর আমাকে তোমার ছেলে বলে ডাকে তার যোগ্য আমি নই।'
“কিন্তু তার বাবা তার দাসদের বললেন, ‘তাড়াতাড়ি করে সবচেয়ে ভাল জামাটা এনে ওকে পরিয়ে দাও। ওর হাতে আংটি ও পায়ে জুতা দাও, আর মোটাসোটা বাছুরটা এনে কাট। এস, আমরা খাওয়া-দাওয়া করে আনন্দ করি, কারণ আমার এই ছেলেটা মরে গিয়েছিল কিন্তু আবার বেঁচে উঠেছে; হারিয়ে গিয়েছিল পাওয়া গিয়েছে।' তারপর তারা আমোদ-প্রমোদ করতে লাগল।
“সেই সময় তাঁর বড় ছেলেটি মাঠে ছিল। বাড়ীর কাছে এসে সে নাচ ও গান-বাজনার শব্দ শুনতে পেল। তখন সে একজন চাকরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, ‘এসব কি হচ্ছে?”
“চাকরটি তাকে উত্তর দিল, ‘আপনার ভাই এসেছে। আপনার বাবা তাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছেন বলে মোটাসোটা বাছুরটা কেটেছেন।'
“তখন বড় ছেলেটি রাগ করে ভিতরে যেতে চাইল না। এতে তার বাবা বের হয়ে এসে তাকে ভিতরে যাবার জন্য সাধাসাধি করতে লাগলেন। সে তার বাবাকে বলল, ‘দেখ, এত বছর ধরে আমি তোমার সেবা-যত্ন করে আসছি; একবারও আমি তোমার অবাধ্য হই নি। তবুও আমার বন্ধুদের সঙ্গে আমোদ-প্রমোদ করবার জন্য তুমি কখনও আমাকে ছাগলের একটা বাচ্চা পর্যন্ত দাও নি। কিন্তু তোমার এই ছেলে, যে বেশ্যাদের পিছনে তোমার টাকা-পয়সা উড়িয়ে দিয়েছে, সে যখন আসল তুমি তার জন্য মোটাসোটা বাছুরটা কাটলে।”
“তার বাবা তাকে বললেন, ‘বাবা, তুমি তো সব সময় আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ। আমার যা কিছু আছে সবই তো তোমার। খুশী হয়ে আমাদের আমোদ-প্রমোদ করা উচিত, কারণ তোমার এই ভাই মরে গিয়েছিল আবার বেঁচে উঠেছে; হারিয়ে গিয়েছিল আবার তাকে পাওয়া গেছে। ” লূক : ১৫ : ১১-৩২
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
ছোট ছেলেটি নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে তার বাবার অবাধ্য হয়েছে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে যখন বাবার কাছে ফিরে এসেছে, তখন বাবা তাকে ক্ষমা করেছেন। এজন্য বড় ভাই ছোট ভাইয়ের সাথে হিংসা করেছে। বাবা বড় ছেলেকে বুঝিয়েছিলেন যে, অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে এসেছে বলে ছোট ভাইকে নিয়ে বেশি আনন্দ করা উচিত।
সত্যের পক্ষে দীক্ষাগুরু যোহন
আজ তোমাদের এমন একজন ব্যক্তির কথা শিক্ষক জানাবেন, যিনি সত্যের স্বপক্ষে স্বাক্ষী দিয়েছেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর নাম হলো সাধু যোহন। সাধু যোহন সম্পর্কে শিক্ষক তোমাদের প্রাথমিক সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করবেন।
হে সদাপ্রভু, তুমি আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখেছ
আর আমাকে জেনেছ।
আমি যা কিছু করি তার সবই তো তুমি জান;
তুমি দূর থেকেই আমার মনের চিন্তা বুঝতে পার।
তুমি আমার কাজকর্ম ও বিশ্রামের বিষয়
খুব ভাল করে খোঁজ নিয়ে থাক;
তুমি আমার জীবন-পথ ভাল করেই জান। গীতসংহিতা ১৩৯ : ১-৩
হে ঈশ্বর, আমি চাই তুমি দুষ্টদের মেরে ফেল।
ওহে রক্ত-পিপাসু লোকেরা, আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও।
মন্দ চিন্তা নিয়ে তারা তোমার বিষয়ে নানা কথা বলে;
তোমার শত্রুরা বাজে উদ্দেশ্যে তোমার নাম নেয়।
হে সদাপ্রভু, যারা তোমাকে অগ্রাহ্য করে
আমি কি তাদের অগ্রাহ্য করি না?
যারা তোমার বিরুদ্ধে ওঠে
আমি কি তাদের ঘৃণার চোখে দেখি না?
তাদের আমি সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করি;
আমার শত্রু বলেই আমি তাদের মনে করি।
হে ঈশ্বর, তুমি আমাকে ভাল করে পরীক্ষা করে দেখ,
আর আমার অন্তরের অবস্থা জেনে নাও;
আমাকে যাচাই করে দেখ,
আর আমার দুশ্চিন্তার কথা জেনে নাও।
তুমি দেখ আমার মধ্যে এমন কিছু আছে কি না যা দুঃখ দেয়;
তুমি আমাকে অনন্ত জীবনের পথে চালাও। গীতসংহিতা ১৩৯ : ১৯-২৪
যীশুর সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে রাজা হেরোদ যীশুর কথা শুনতে পেয়েছিলেন। কোন কোন লোক বলছিল, “উনিই সেই বাপ্তিস্মদাতা যোহন। তিনি মৃত্যু থেকে বেঁচে উঠেছেন বলে এই সব আশ্চর্য কাজ করছেন।”
কেউ কেউ বলছিল, “উনি এলিয়”; আবার কেউ কেউ বলছিল,
“অনেক দিন আগেকার নবীদের মত উনিও একজন নবী।”
এই সব কথা শুনে হেরোদ বললেন, “উনি যোহন, যাঁর মাথা কেটে
ফেলবার আদেশ আমি দিয়েছিলাম। আবার উনি বেঁচে উঠেছেন।”
এই ঘটনার আগে হেরোদ লোক পাঠিয়ে যোহনকে ধরেছিলেন এবং তাঁকে বেঁধে জেলে রেখেছিলেন। হেরোদ তাঁর ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার জন্যই এটা করেছিলেন। হেরোদ হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন বলে যোহন বারবার হেরোদকে বলতেন, “আপনার ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করা আপনার উচিত হয় নি।” এইজন্য যোহনের উপর হেরোদিয়ার খুব রাগ ছিল। সে যোহনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু হেরোদ যোহনকে ভয় করতেন বলে সে তা করতে পারছিল না। যোহন যে একজন ঈশ্বরভক্ত ও পবিত্র লোক হেরোদ তা জানতেন, তাই তিনি যোহনকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতেন। যোহনের কথা শুনবার সময় মনে খুব অস্বস্তি বোধ করলেও হেরোদ তাঁর কথা শুনতে ভালোবাসতেন।
শেষে হেরোদিয়া একটা সুযোগ পেল। হেরোদ নিজের জন্মদিনে তাঁর বড় বড় রাজকর্মচারী, সেনাপতি ও গালীল প্রদেশের প্রধান লোকদের জন্য একটা ভোজ দিলেন। হেরোদিয়ার মেয়ে সেই ভোজসভায় নাচ দেখিয়ে হেরোদ ও ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদের সন্তুষ্ট করল।
তখন রাজা মেয়েটিকে বললেন, “তুমি যা চাও আমি তোমাকে তা-ই দেব।” হেরোদ মেয়েটির কাছে শপথ করে বললেন, “তুমি যা চাও আমি তা-ই তোমাকে দেব। এমন কি, আমার রাজ্যের অর্ধেক পর্যন্তও দেব।”
মেয়েটি গিয়ে তার মাকে বলল, “আমি কি চাইব?”
তার মা বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথা ।"
মেয়েটি তখনই গিয়ে রাজাকে বলল, “একটা থালায় করে আমি এখনই বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথাটা চাই।”
এই কথা শুনে রাজা হেরোদ খুব দুঃখিত হলেন, কিন্তু ভোজে নিমন্ত্রিত লোকদের সামনে শপথ করেছিলেন বলে মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলেন না। তিনি তখনই যোহনের মাথা কেটে আনবার জন্য একজন জল্লাদকে হুকুম দিলেন। সেই জল্লাদ জেলখানায় গিয়ে যোহনের মাথা কেটে একটা থালায় করে তা নিয়ে আসল। রাজা সেটা মেয়েটিকে দিলে পর সে তা নিয়ে গিয়ে তার মাকে দিল। এই খবর পেয়ে যোহনের শিষ্যেরা এসে তাঁর দেহটা নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন। মার্ক ৬ : ১৪-২৯
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
দীক্ষাগুরু সাধু যোহন ছিলেন যীশুর অগ্রদূত। তিনি মরুপ্রান্তরে এই বাণী ঘোষণা করেছেন; তোমরা প্রভুর আসার পথ প্রস্তুত কর এবং সহজ সরল করে তোল তোমাদের চলার পথ। তিনি বনের মধু, পশুর লোমের কাপড় ও পঙ্গপাল খেয়ে অতি সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। সত্যকে “সত্য” এবং মিথ্যাকে “মিথ্যা” বলে; সত্যের সপক্ষে সাক্ষী দিয়েছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। সত্যের সপক্ষে সাক্ষী এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ফলে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেও এমন অনেক সময় উপস্থিত হয়। যখন আমরা সত্যের সপক্ষে সাক্ষী দিতে পারি। অন্যায় দেখে আমরা অনেক সময় প্রতিবাদ করি না। আমরা ভয় পাই, পরে যদি আমার উপর কোনো বিপদ এসে পড়ে! তাই সত্য বলার সাহস আমাদের থাকতে হবে। দীক্ষাগুরু সাধু যোহন আমাদের অনুপ্রাণিত করেন যাতে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া অনৈতিক, অপ্রীতিকর, মিথ্যা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ ও সত্যের সপক্ষে সাক্ষী দেই।
বাড়ির কাজ
শিক্ষক তোমাদের অষ্টকল্যাণবাণী অনুসরণ করে কীভাবে ক্ষমাশীল, দয়ালু, শান্তিকামী ও সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে পারো তা নিয়ে বাড়ির কাজ বুঝিয়ে দিবেন। ক্ষমাশীল হতে, দয়ালু হতে, শান্তিকামী ও সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে যা যা করতে পারো তা তোমরা লিখবে। একে বলে কর্মপরিকল্পনা। কর্মপরিকল্পনা তৈরি সহজ করতে নিচের প্রশ্নগুলো শিক্ষক তোমাদের দিবেন।
প্রশ্নগুলো হলো :
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mo>→</mo></math> যীশুর অষ্টকল্যাণ বাণী থেকে কোনটি তোমার বেশি ভালো লেগেছে? যেটি বেশি ভালো লেগেছে সেটির আলোকে দুটি কাজ করে পরবর্তী শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে।
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mo>→</mo></math>প্রতিবেশী ও ভাইয়ের সেবা করার মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের সেবা করতে পারি, যীশুর এ বাণীর আলোকে দুটি কাজ করে প্রতিবেদন লিখ। কখন, কোথায়, কার জন্য ও কীভাবে করেছ তা বর্ণনা কর।
<math xmlns="http://www.w3.org/1998/Math/MathML"><mo>→</mo></math>তুমি কি কখনো সত্যের সপক্ষে সাক্ষী দিয়েছ? যদি দিয়ে থাকো তবে বর্ণনা করো। আর যদি না হয় তবে চেষ্টা করো এরকম একটি কাজ করতে এবং পরবর্তী সেশনে তা উপস্থাপন করো।
শিক্ষক তোমাকে বলবেন পরবর্তী সেশনে কর্মপরিকল্পনাটি শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করতে।
তোমার পরিবারের সবাই কেমন আছে তা শিক্ষকের সাথে শেয়ার করতে পারো। সাম্প্রতিক বিষয় যেমন— উৎসব, খেলাধুলা, সমস্যা, ইত্যাদি নিয়েও কথা বলতে পারো।
কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপনা
উপস্থাপনের জন্য শিক্ষক তোমাকে পোস্টার কাগজ, দেয়ালে টাঙানোর জন্য binding clip, আঠা, masking tape, ইত্যাদি জোগাড় করে দিবেন।
কর্মপরিকল্পনার খসড়াগুলো শিক্ষকের কাছে জমা দাও। তিনি প্রয়োজনে মন্তব্য করে সংশোধন দিবেন। এখন এই সংশোধিত কর্মপরিকল্পনা পোস্টার কাগজে লিখে শ্রেণিকক্ষে সবার সামনে উপস্থাপন করো। তোমার সহপাঠীদের উপস্থাপনা মনোযোগ দিয়ে শোনো।
তুমি যীশুকে গ্রহণ করার জন্য যে কর্মপরিকল্পনা করেছ তা প্রাত্যহিক জীবনে অনুশীলন করবে। মঙ্গলময় ঈশ্বর তোমার সঙ্গে থাকুন ।
তুমি নিশ্চয়ই উইলিয়াম কেরি ও সাধ্বী মাদার তেরেজার কথা শুনেছ? যদি নাও শুনে থাকো আজ তাদের সম্পর্কে জানবে।
আজ তোমরা শিক্ষকের নির্দেশনায় চার প্যানেলের comics তৈরি করবে। এটা সত্যিই খুব মজার বিষয়। একটি প্যানেলে সাধ্বী মাদার তেরেজা ও অন্যটিতে ড. উইলিয়াম কেরি'র ছবিসহ সংক্ষিপ্ত কাজগুলো লেখা থাকবে। তোমরা প্যানেলগুলোতে কাজের বিবরণী অনুযায়ী ছবি অঙ্কন করবে। তোমরা কীভাবে এই কাজটি করবে সে সম্পর্কে শিক্ষক তোমাদের স্পষ্ট করে বলবেন।
তোমাকে মাদার তেরেজা ও উইলিয়াম কেরি'র জীবনের ঘটনা প্রবাহের সাথে মিল রেখে ছবি অঙ্কন করতে হবে। প্রথমে তোমরা সবাই ১০ মিনিট মনোযোগ দিয়ে মাদার তেরেজা ও উইলিয়াম কেরি'র জীবনের ঘটনাগুলো পাঠ করবে। ঘটনাগুলো নিয়ে কীভাবে ছবি অঙ্কন করা যায় তাও চিন্তা করতে হবে। তোমাদের প্রত্যেককে paper * sheet এবং প্রয়োজনীয় রং পেন্সিল সরবরাহ করা হবে। তুমি যাতে সুন্দরভাবে ছবি অঙ্কন করতে পারো তার জন্য পরিমিত জায়গার ব্যবস্থা করা হবে। তোমাকে ছবি অঙ্কন করার জন্য ৩০ মিনিট সময় দেয়া হবে। ঐ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ছবি অঙ্কন করতে হবে।
ছবি অঙ্কন করার জন্য নিচে মাদার তেরেজা ও উইলিয়াম কেরি'র কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণী দেয়া আছে। তুমি প্রথমে তাদের কাজগুলো পড়ো। পড়া শেষ হলে শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী ছবি অঙ্কন শুরু করো। তুমি তোমার ইচ্ছামতো যে দৃশ্যগুলোর বর্ণনা দেওয়া আছে, তার পরিস্থিতিগুলো কল্পনা করে নিতে পারো। চরিত্রগুলোও ইচ্ছামতো ভাবতে পারো।
তোমার আঁকা ছবি পর্যবেক্ষণ
মাদার তেরেজা ও উইলিয়াম কেরি'র জীবন ও কাজের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে তুমি যোগ্যতার সাথে কত সুন্দর ছবি অঙ্কন করতে পেরেছ, শিক্ষক তা পর্যবেক্ষণ করবেন।
তোমার নিশ্চয়ই এ দুজন মহান ব্যক্তির কাজ নিয়ে ছবি আঁকতে বেশ মজা লেগেছে। কেমন মজা লেগেছে তা তোমার থেকে শিক্ষক জানতে চাইলে সুন্দর করে উত্তর দিও। তিনি কথাগুলো ভালো করে শুনবেন।
তোমাদের দুটি দলে ভাগ করা হবে। একটি দলে মাদার তেরেজার জীবনের ও অন্য দলে উইলিয়াম কেরি’র জীবনের তিনটি কাজ পোস্টার পেপারে লিখবে। মাদার তেরেজা ও উইলিয়াম কেরি যে কাজগুলো করেছেন, সেই কাজের মধ্য দিয়ে মানুষ কীভাবে উপকার পেয়েছে তা তোমরা লিখবে।
তারপর সেই লেখাগুলো market place করবে। অর্থাৎ তোমরা এক দলের কাজ অন্য দল পরিদর্শন করবে। অন্য দল থেকে যদি নতুন কোনো ধারণা পাওয়া যায় তাহলে তা নিজের দলের লেখার সাথে যুক্ত করবে। পরে প্রত্যেক দল শ্রেণিকক্ষে তা উপস্থাপন করবে।
আজ তোমাদের নিয়ে ২টি দল করা হবে। একটি দল মাদার তেরেজা'র জীবন নিয়ে ও অন্য দলকে উইলিয়াম কেরি'র জীবন নিয়ে আলোচনা করবে। আলোচনা শেষে শিক্ষক প্রত্যেক দলে ১, ২, ৩, ৪ এভাবে গুনবে। গণনা শেষ হলে সব ১ একটি দলে বসবে। এভাবে সব ২ নিয়ে, সব ৩ নিয়ে এবং সব ৪ নিয়ে আলাদা আলাদা দল হবে। তারপর তোমরা দলে মাদার তেরেজা ও উইলিয়াম কেরি'র জীবনের ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করবে।
আজকে শিক্ষক তোমাদের মজার গল্প, ভিডিও, গান, ছবি ও বই থেকে মাদার তেরেজা ও উইলিয়াম কেরি’র জীবনের ঘটনা প্রবাহ উপস্থাপন করবেন। শিক্ষক তোমাদের সাথে মাদার তেরেজা ও উইলিয়াম কেরির জীবন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। এক্ষেত্রে তিনি ছবি, ভিডিও, পোস্টার ও অন্যন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করবেন।
চলো মাদার তেরেজা সম্পর্কে জানি।
জন্ম
মাদার তেরেজা ২৬শে আগস্ট ১৯১০ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়তে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পরিবার ছিল আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত।
আহ্বান
১২ বছর বয়সে তিনি ঈশ্বরের কাজের জন্য আহ্বান পেয়েছিলেন। তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন যে তাকে খ্রীষ্টের কাজ করার জন্য একজন ধর্মপ্রচারক হতে হবে। ১৮ বছর বয়সে তিনি পিতা-মাতাকে ছেড়ে আয়ারল্যান্ডে ও পরে ১৯২৯ সালে ভারতে আইরিশ নান সম্প্রদায়ের “সিস্টার্স অব লরেটো” সংস্থায় যোগদান করেন। ডাবলিনে কয়েক মাস প্রশিক্ষণের পর তাকে ভারতে পাঠানো হয়। তিনি ভারতে ১৯৩১ সনের ২৪শে মে সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন পরে ১৯৩৭ সালের ১৪ই মে চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন।
সেবা কাজ
তিনি কোলকাতার দরিদ্র পল্লিতে দরিদ্রতম দরিদ্রদের মধ্যে কাজ করেন। যদিও তার আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না। তিনি বস্তির জন্য একটি উন্মুক্ত স্কুল শুরু করেছিলেন। ১৯৫০ সালের ৭ অক্টোবর তেরেজা “ডায়োসিসান ধর্মপ্রচারকদের সংঘ” করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি লাভ করেন। এ সমাবেশই পরবর্তীকালে “দ্য মিশনারিজ অব চ্যারিটি” হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। “দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি” হলো একটি খ্রীষ্ট ধর্মপ্রচারণা সংঘ ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। ১৯৫০ সালে তিনি “নির্মল শিশু ভবন” স্থাপন করেন। এই ভবন ছিল এতিম ও বসতিহীন শিশুদের জন্য এক স্বর্গ। ২০১২ সালে এই সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন ৪,৫০০জনেরও বেশি সন্ন্যাসিনী। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই ধর্মপ্রচারণা কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। তার প্রতিষ্ঠিত চ্যারিটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে দরিদ্রদের মধ্যে কার্যকর সহায়তা প্রদান করে থাকে যেমন— বন্যা, মহামারি, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, নেশা, গৃহহীন, পারিবারিক পরামর্শদান, অনাথ আশ্রম, স্কুল, মোবাইল ক্লিনিক ও উদ্বাস্তুদের সহায়তা ইত্যাদি। তিনি ১৯৬০-এর দশকে ভারত জুড়ে এতিমখানা, ধর্মশালা এবং কুষ্ঠরোগীদের ঘর খুলেছিলেন। তিনি অবিবাহিত মেয়েদের জন্য তার নিজের ঘর খুলে দিয়েছিলেন। তিনি এইডস আক্রান্তদের যত্ন নেয়ার জন্য একটি বিশেষ বাড়িও তৈরি করেছিলেন। মাদার তেরেজার কাজ সারা বিশ্বে স্বীকৃত এবং প্রশংসিত হয়েছে। তার মৃত্যুর সময় বিশ্বের ১২৩টি দেশে মৃত্যু পথযাত্রী এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষা রোগীদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল।
পুরস্কার
মাদার তেরেজা ১৯৬২ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে “ম্যাগসেসে শান্তি পুরস্কার” এবং ১৯৭২ সালে “জওহরলাল নেহেরু পুরস্কার” লাভ করেন। তিনি ১৯৭৮ সনে “বালজান পুরস্কার” লাভ করেন। মাদার তেরেজা ১৯৭৯ সনে দুঃখী মানবতার সেবাকাজের স্বীকৃতিস্বরূপ “নোবেল শান্তি পুরস্কার” অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান “ভারতরত্ন” লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে “প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম পুরস্কার” লাভ করেন। ২০১৬ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে একটি অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিস তাকে “সন্ত” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং ক্যাথলিক মিশনে তিনি “কোলকাতার সন্ত তেরিজা” নামে আখ্যায়িত হন।
মৃত্যু
তিনি ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৫ তারিখ ৮৭ বছর বয়সে কোলকাতার পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন।
জন্ম
উইলিয়াম কেরি ১৭৬১ সালের ১৭ই জুন ইংল্যান্ডের পলাসপুরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আহ্বান
উইলিয়াম কেরি বাইবেলের যিশাইয় ৫৪ : ২-৩ পদের আলোকে ইংল্যান্ডে “অমর উপদেশ” দিয়েছিলেন। উপদেশটির প্রসিদ্ধ উদ্ধৃতিটি ছিল : “Expect great things from God; attempt great things for God.” [ঈশ্বরের কাছ থেকে মহৎ কিছু প্রত্যাশা কর; ঈশ্বরের জন্য মহৎ কিছু কর]। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের জীবন পরিবর্তন করার আহ্বান পেয়ে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে আসেন। কেরি ১৭৯৩ সালের ১৩ই জুন একটি ব্রিটিশ জাহাজে লন্ডন থেকে যাত্রা করে নভেম্বর মাসে কোলকাতায় আসেন। তাকে “আধুনিক মিশনের জনক” বলা হয়।
কাজ
কেরি ১৭৯২ সালের অক্টোবর মাসে ইংল্যান্ডে ব্যাপ্টিস্ট মিশনারী সোসাইটি গঠন করেন। পরবর্তী সময়ে তা বিএমএস ওয়ার্ল্ড মিশন নামে রূপ নেয়। ১৭৯৪ সালে কেরি কোলকাতায় নিজের খরচে দরিদ্র শিশুদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। যা সমগ্র ভারতে প্রথম প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি সামাজিক প্রথা সংস্কার করে মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। ১৮০৭ সালে কেরিকে ব্রাউন ইউনিভার্সিটি সম্মান সূচক “ডক্টর অফ ডিভিনিটি” ডিগ্রি প্রদান করেন। ১৮১৭ সালে দেশীয় ছাত্রদের মাঝে পুস্তকের অভাব মেটানোর জন্য কোলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি স্থাপিত হয়। উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে ১৬জন ইউরোপীয়, ৪জন মৌলবি ও ৪জন বাঙালি হিন্দু নিয়ে এর পরিচালক সমিতি গঠন করা হয়। কেরি ১৮১৮ সালে “দিকদর্শন” নামে একটি মাসিক, “সমাচার দর্পণ” নামে একটি সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা এবং “Friends of India” নামে একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। সেই বছর তিনি শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। যা ছিল এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি প্রদানকারী কলেজ। পরে কলেজটি শ্রীরামপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। তিনি ১৮২০ সালে কোলকাতার আলিপুরে এগ্রি হর্টিকালচারাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। কেরি ও তার দল পাঠ্যপুস্তক ও অভিধান তৈরি করেছিলেন। তিনি বাংলা ও সংস্কৃতের ব্যাকরণ লিখেছিলেন। তিনি ছিলেন সমাজ সংস্কারক, সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ববিদ ও একজন ধর্ম প্রচারক।
তিনি সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন। পরে ১৮২৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয়। যেদিন আইন পাস হয় সেদিনই তিনি নিজে ঘোড়ায় চড়ে কোলকাতার লোকদের এই আইনের কথা জানিয়ে দেন। শিশুবলি ও সুত্তির প্রথা বন্ধ করতে সাহায্য করেছিলেন। জাতিগত বৈষম্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। উদ্ভিদবিদ্যার সাথে তার ছিল ব্যাপক পরিচিতি। তাকে “ভারতের প্রথম সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ববিদ” খেতাব দেওয়া হয়। তিনি হিন্দু ক্লাসিক ও রামায়ণ ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। কেরি বাংলা, ওড়িয়া, অসমীয়া, মারাঠি, হিন্দি এবং সংস্কৃত ভাষাসহ ৪৪টি ভাষায় এবং উপভাষায় সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাইবেল অনুবাদ করেন। তিনি ভারতে প্রথম ছাপা মেশিন বা প্রেস চালু করেন।
মৃত্যু
১৮৩৪ সালের ৯ই জুন ৭৩ বছর বয়সে উইলিয়াম কেরি'র কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। তাকে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশনারীদের সমাধি ক্ষেত্রে সমাহিত করা হয়।
খ্রীষ্টধর্মের অন্যতম একটি নীতিগত বিষয় হলো সমাজের সকল মানুষের সাথে সম্প্রীতিতে বসবাস করা। সৃষ্টিকে ভালোবেসে ও সম্প্রীতিতে অবস্থানের জন্য খ্রীষ্ট ধর্ম বিশ্বাসীরা সমাজে বিভিন্ন সেবাধর্মী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে মানুষের কাঙ্খিত বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ।
শিক্ষা
খ্রীষ্টধর্ম অনুসারীদের দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশে উচ্চতর গুণগত মানসম্পন্ন অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে সব ধর্মের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন, মূল্যবোধ, নৈতিকতা চর্চা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। পবিত্র বাইবেলে লেখা আছে,“সবশেষে বলি, তোমরা সবাই পরস্পরের সঙ্গে মিল রেখে বসবাস করো; তোমরা সহানুভূতিশীল, একে অপরকে ভালোবাসো, দরদি ও নতনম্র হও” (১ পিতর ৩ : ৮)। খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে যে, সব ধর্মের সকল শিশুর জীবন গঠনের জন্য নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা তাদের দায়িত্ব।
অন্যদিকে দেশের শিক্ষার চাহিদাপূরণে এ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সাথে একযোগে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সকলের শিক্ষা গ্রহণের জন্য উন্মুক্ত।
স্বাস্থ্য
খ্রীষ্টধর্ম অনুসারীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা উন্নয়ন, প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয় যা জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এর সুবিধা পেয়ে থাকে। শারীরিক, মানসিক ও আবেগিক অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি চর্চা করে থাকে।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনকল্পে খ্রীষ্টধর্মের অনুসারীদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজ ও মানুষের প্রয়োজন মেটাতে ও তাদের পাশে দাঁড়াতে সর্বদা তৎপর যেমন— বন্যার্তদের সাহায্য করা, খরা, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক বিপর্যায়গুলোতে সরকারের পাশাপাশি সর্বদা সমমনায় কাজ করা। স্বাধীনতা সংগ্রামে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, শান্তিস্থাপনে চার্চ ও চার্চের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় সম্প্রীতি চর্চা করে চলছে। বাইবেলে লেখা আছে, “একে অন্যকে ভাইয়ের মত গভীরভাবে ভালবাসো। নিজের চেয়ে অন্যকে বেশী সম্মান করো” (রোমীয় ১২ : ১০)।
এই সেশনগুলোর অংশ হিসেবে তুমি মাদার তেরেজা ও উইলিয়াম কেরি'র কর্মময় জীবন থেকে যা শিখেছ তার প্রেক্ষিতে মাদার তেরেজা'র জীবনের একটি কাজ ও উইলিয়াম কেরি'র জীবনের একটি কাজ বাছাই করবে। তারপর তুমি নিজে অথবা সহপাঠীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন করবে।
মাদার তেরেজা'র জীবনের কোন কাজটি তোমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে, তা তুমি বেছে নাও । অনুরূপভাবে উইলিয়াম কেরি'র জীবনের কোন কাজটি তোমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে, সেটিও বেছে নাও। তাদের উভয়ের জীবন থেকে একটি করে কাজ নিজে করো। যদি তুমি তোমার সহপাঠীদের সাথে শ্রেণিকক্ষের বাইরে সম্পাদন করতে চাও, তাও করতে পারো।
তোমার উপস্থাপনা
তোমাকে শ্রেণিকক্ষে তোমার করা কাজ দুটি উপস্থাপন করতে হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে শিক্ষক তোমাকে সাহায্য করবেন। উপস্থাপনে তোমার যা লাগবে শিক্ষক তোমাকে তা সরবরাহ করবেন। উপস্থাপন দিনে পর্যায়ক্রমে তোমরা একজন করে উপস্থাপন করবে। একদিনে হয়তো সবার উপস্থাপন সম্ভব নয় তাই ধারাবাহিকভাবে তোমাদের উপস্থাপন করতে হবে। শিক্ষক তোমাদের উপস্থাপন দেখবেন। উপস্থাপন শেষে তোমার সহপাঠীদের যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে তুমি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিও। তাদের সহজভাবে বুঝিয়ে বোলো।
তোমার শিক্ষকও তোমাকে হয়তো প্রশ্ন করবেন। সে প্রশ্নের উত্তর ভেবে-চিন্তে দিও। আর মনে রেখো একজন নৈতিক ও মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ যীশুখ্রীষ্টের শিক্ষা অনুসরণ করে পরিবার, সমাজ ও প্রকৃতির জনকল্যাণমূলক কাজ করে।